আল ফাত্তাহ الفتاح Al-Fattah

আল-ফাত্তাহ (শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী, প্রারম্ভকারী, বিজয়দানকারী)[1]

আল-ফাত্তাহ হলেন যিনি তাঁর আহকামুশ শর‘ঈয়্যাহ, আহকামুল কাদরীয়্যাহ ও আহকামুল জাযায়ের দ্বারা বান্দার মাধ্যে ফয়সালা করেন, যিনি তাঁর স্নেহে ও ভালোবাসায় সাদিকীনদের চক্ষু খুলে দেন, তাঁকে চিনতে, ভালোবাসতে ও তাঁর সমীপে আকুতি-বিনয়ী হতে তাদের অন্তরসমূহ খুলে দেন, তিনি তাঁর রহমত ও নানা ধরণের রিযিকের দরজা খুলে দেন, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভের উপায়সমূহ বলে দেন।[2]

আল্লাহর ফয়সালা দুধরণের:

প্রথমত: তাঁর দীনি (শরী‘আতের বিধানের মাধ্যমে) ও জাযায়ী (প্রতিদান দানের মাধ্যমে) হুকুমে ফয়সালা করা।

দ্বিতীয়ত: তাঁর কাদরী হুকুম তথা তাকদীরে ইতিপূর্বে যা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন সে অনুসারে ফয়সালা করা।

তাঁর দীনি হুকুমের দ্বারা ফয়সালা বলতে বুঝায়, নবী-রাসূলদের মাধ্যমে মুকাল্লিফদের প্রয়োজনীয় যেসব বিধান শরী‘আতে বিধিবদ্ধ করেছেন সেসব বিধানে ফয়সালা এবং তারা সেসব সরল-সঠিক পথে সুদৃঢ় ভাবে চলত। আর জাযায়ী হুকুমের দ্বারা ফয়সালা বলতে বুঝায়, তাঁর নবী-রাসূল ও তাদের বিরোধীদের মধ্যে, তাঁর প্রিয়জন (অলীদের) ও তাদের শত্রুদের মধ্যে যেসব বিরোধ ছিল তিনি তাঁর নবী-রাসূল ও তাদের অনুসারীদেরকে সাহায্য করে সম্মানিত করেছেন ও বিজয় দান করেছেন; পক্ষান্তরে তাদের বিরোধী শত্রুদেরকে লাঞ্ছিত-অপমানিত ও পরাজিত করেছেন। এমনিভাবে কিয়ামতের দিনে তাঁর মহাফয়সালা এবং সে দিন সৃষ্টিকুলের প্রত্যেক আমলকারীকে তাদের আমল অনুযায়ী ফয়সালা করবেন।

অন্যদিকে তাঁর কাদরী হুকুম বলতে বুঝায়, তিনি বান্দার ভাগ্যে ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ, উপকার-ক্ষতি ও দান-বারণ যা কিছু নির্ধারণ করে রেখেছেন সে অনুসারে ফয়সালা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿مَّا يَفۡتَحِ ٱللَّهُ لِلنَّاسِ مِن رَّحۡمَةٖ فَلَا مُمۡسِكَ لَهَاۖ وَمَا يُمۡسِكۡ فَلَا مُرۡسِلَ لَهُۥ مِنۢ بَعۡدِهِۦۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ٢﴾ [فاطر: ٢]

“আল্লাহ মানুষের জন্য যে রহমত উন্মুক্ত করে দেন তা আটকে রাখার কেউ নেই। আর তিনি যা আটকে রাখেন, তারপর তা ছাড়াবার কেউ নেই। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ২] অত:এব, রাব্বুল আলামীন হলেন শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী ও সম্যক পরিজ্ঞাত। তিনি তাঁর বাধ্য বান্দাদেরকে তাঁর দান ও সম্মানের ভাণ্ডার থেকে দান করে ফয়সালা করবেন, আর তাঁর শত্রুদেরকে অপমানিত ও শাস্তি দিয়ে ফয়সালা করবেন। এটিই তাঁর দয়া ও ন্যায় পরায়নতা।[3]


[1] এ নামের দলিল হলো আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী,

﴿قُلۡ يَجۡمَعُ بَيۡنَنَا رَبُّنَا ثُمَّ يَفۡتَحُ بَيۡنَنَا بِٱلۡحَقِّ وَهُوَ ٱلۡفَتَّاحُ ٱلۡعَلِيمُ٢٦﴾ [سبا: ٢٦]

“বলুন, আমাদের রব আমাদেরকে একত্র করবেন। তারপর তিনি আমাদের মধ্যে সঠিকভাবে ফয়সালা করবেন। আর তিনিই শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী ও সম্যক পরিজ্ঞাত।” [সূরা সাবা’, আয়াত : ২৬]    

[2] আত-তাফসীর, ৫/৬২৬।

[3] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৮৪।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top